December 22, 2024, 9:29 am

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরে ভারত থেকে আনা ৪৪ কেজি গাঁজা উদ্ধার, আটক ৫ চুয়াডাঙ্গায় জামায়াত আমির/কোনো বিভক্তি নয়, ঐক্যই হোক এ জাতির সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধি আ.লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না: হানিফের বিৃবতি পদ্মায় পানি বৃদ্ধি, পানিবন্দি ৪০ গ্রাম, নিম্নাঞ্চলে মৌসুমী ডাল ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা ১২০০ টাকা কেজি দরে প্রথম চালানে ভারতে গেল ১২ টন ইলিশ, ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির জন্য ২ সদস্যর আহ্বায়ক কমিটি, বিলুপ্ত মিরপুর উপজেলা কমিটি/ যা বললেন জাকির সরকার জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের রোহিঙ্গা সংকট অবহিত করলেন ড. ইউনূস, সমাধানে ৩ প্রস্তাব ইবিতে নব নিযুক্ত উপাচার্য/ শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলাই তার স্বপ্ন আট ঘন্টার ব্যবধানে মাগুরা ও ঝিনাইদহে সড়কে নিহত ৫ নিউইয়র্কে তৌহিদ-জয়শঙ্কর বৈঠক/বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতি

এখন অগোচরেই চলে যায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের রূপকার কুষ্টিয়ার কৃতিপুরুষ কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর জন্ম-মৃত্যু দিবস

ড. আমানুর আমান, সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক কুষ্টিয়া/

অনেকটা নিরবেই বলা যায় সবার অগোচরেই চলে গেল বাংলাদেশের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের রূপকার আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি সম্পন্ন গণ-মানুষের প্রকৌশলী বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্টে মৃত্যুবরণ করেন। কীর্তির দীর্ঘ তালিকায় অবাক কের দেয়ার মতো অসংখ্য কাজের মধ্যে কুষ্টিয়ার এই গর্বিত সন্তান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অভিধার সংজ্ঞায়ই পাল্টে দিয়েছিলেন যা শুধু বাংলাদেশে নয় সারা বিশ্ব জুড়ে চমক ফেলে দিয়েছিল বিশেষ করে তার গ্রামীণ উন্নয়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল মডেলের ধারনা। বিশ্বের অনেক দেশ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল তৈরিতে কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর মডেল আজও অনুসরণ করে তাকে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রকৌশলী তিনি।
তাঁকে বাংলাদেশের গ্রামীণ অবকাঠামোর রূপকার হিসেবে বিশেষভাবে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
একজন দক্ষ প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম ছিলেন একেবারে একজন সাধারণ জীবন যাপনের মানুষ। স্বীয় যোগ্যতা দক্ষতা ও অসীম ধীশক্তির অধিকারী এই মানুষটি নিজের কর্মগুণে বাংলাদেশ তথা বিশ্ব দরবারে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করে একটা সময় সাধারণ থেকে হয়ে উঠেছিলেন অসাধারণ।
১৯৪৫ সালে এই কুষ্টিয়ার মাটিতে জন্মগ্রহণ করেন এই খ্যাতিমান প্রকৌশলী। তার শৈশব, কৈশর ও শিক্ষা জীবনের প্রথম অধ্যায়টা কেটেছিল এই শহরেই।
১৯৬৬ সালে বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ১৯৬৭ সালে নিজ জেলা কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। একাত্তরের ৩০ এপ্রিল তিনি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরে ভারতের ‘বেতাই’ ইয়ুথ ক্যাম্পে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বৃহত্তর কুষ্টিয়া এবং পাবনা অঞ্চল নিয়ে গঠিত জোনাল কাউন্সিলের অন্যতম সহযোগী যোদ্ধা হিসেবে তিনি মুক্তিকামী যুবকদের সংগঠিত করে প্রাথমিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। ‘জোনাল ইঞ্জিনিয়ার’ হিসেবে রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্টের নকশা প্রণয়ন করে অপারেশনে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেন।
১৯৭৭ সালে তিনি যুক্তরাজ্যে যান সেখানে শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি আরবান এন্ড রিজিওন্যাল প্ল্যানিংয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। বিদেশ থেকে ফিরে তিনি যোগ দেন বাংলাদেশ পল্লী কর্মসূচিতে উপ-প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথমে পল্লী কর্মসূচির এবং পরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের আওতায় নগর নির্মাণ কর্মসূচির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন।
১৯৯২ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী ব্যুরোতে প্রকৌশল উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। এখান থেকেই জন্ম হয় একজন প্রকৌশল চিন্তার জনকের। তিনি এই সংস্থাটিকে আমুল পরিবর্তনের পরিকল্পনা করেন। তিনি গতানুগতিক সিস্টেমেটিক ব্যুরো-অবকাঠামো ধারনা থেকে বের করে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে রুপ দেয়ার এক মহা পরিকল্পনা তৈরি করেন। প্রথম দিকে তৎকালীন সরকার বিষয়টিতে প্রচুর অর্থের দিক বিবেচনা করে দ্বিমত দেখালেও পরে কামরুল ইসলাম নিজেই উদ্যোগী হয়ে এ খাতে বিদেশী লোন প্রাপ্তির বিষয়টি সামনে আনেন। পরে সরকার রাজি হয়। তিনি প্রতিষ্ঠানটির কাঠামোগত সংস্কার সাধন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পান।
তিনি প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করেন এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মডেল হিসেবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলকে বিশ্বদরবারে নিয়ে যান। এই সেক্টরে তিনি কাজ করেন দীর্ঘ ৩৩ বছর। তাঁর পরিকল্পনাতেই আজ বাংলাদেশের গ্রামীণ পর্যায় পর্যন্ত পাকা সড়কের ঝলক দেখা যায়।
তিনি জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নসমূহের মুল মানচিত্র প্রস্তুতির জন্য ভৌগলিক তথ্য ব্যবস্থা (জিআইএস) চালু করে তথ্য মাধ্যমে বিপ্লব সাধন করেন। জাইকার সাহায্যপুষ্ট আদর্শ গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্প (এমআরডিপি) সহ গ্রামীণ রাস্তা, সেতু, সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, সমাজ উন্নয়ন ও সমবায় ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ, জরুরি দুর্যোগ প্রশমন কর্মসূচির আওতায় প্রয়োাজনীয় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে তিনি সময়পযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
এসবের বাইরেও সিদ্দিকীর আরও বর্ণাঢ্য কর্ম জীবন রয়েছে। ১৯৯৯ সালের মে মাসে পিডিবির চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন।

২০০০ সালে তিনি যমুনা সেতু ডিভিশন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ২০০০ থেকে ২০০১ পর্যন্ত গৃহায়ান ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের সচিব, ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বেসরকারীকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০৩ থেকে ২০০৪ মেয়াদে গোøবাল ওয়াটার পার্টনারশিপ-দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের চেয়ারপার্সন ছিলেন।
কর্মমুখর জীবনে প্রয়াত এই গুণীব্যাক্তি বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য শক্তি সমিতি-এর সভাপতি, নগর উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ফোরাম-এর সভাপতি, ইঞ্জিনিয়রিং স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ-এর সরকারি পরিচালনা পর্ষদ-এর কনভেনার, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ কমিটির সভাপতি, সিদ্দিক’স ফাউন্ডডেশন, কুষ্টিয়ার সভাপতি, বেগম হামিদা সিদ্দিক কলেজিয়েট স্কুলের সভাপতি, ঢাকাস্থ কুষ্টিয়া জেলা সমিতির সভাপতি, গুলশান সোসাইটির সহ-সভাপতি, আই কেয়ার সোসাইটি-এর সহ-সভাপতি, কাজী আবু মোকাররম ফজলুল বারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন সেন্টারের উপদেষ্টা ও ২০০২-‘০৩ মেয়াদে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) তিনি নির্বাচিত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ২০০৫ সালে প্রায় চার দশকের কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
যদিও যথেষ্ট নয় তথাপিও নানাভাবে সম্মানিত হয়েছেন এই মানুষটি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভাসানী স্বর্ণপদক (১৯৯৫), কবি জসীম উদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৯৫), আইইবি স্বর্ণপদক (১৯৯৮), সিআর দাস স্বর্ণপদক (১৯৯৯), আব্বাস উদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৯৯), শেরেবাংলা স্বর্ণপদক (২০০০), বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী স্বর্ণপদক (২০০০), জাইকা মেরিট অ্যাওয়ার্ড (২০০০), যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স ফেলোশিপ, বাংলা একাডেমি ফেলো (২০০৭) প্রভৃতি।

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার গ্রামীণ অবকাঠমো উন্নয়নের ইতিহাসে যে মাইলফলক তৈরি করেছে তার পুরোধা পুরুষ ছিলেন কামরুল ইসলাম সিদ্দিক। সকল কাজের পরিসংখ্যান করে দেখা যায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রতিষ্ঠিত করা ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় কীর্তি। তিনি এলজিইডিতে যে বীজ বপন করেছিলেন, তার ওপর ভিত্তি করেই দেশে আজ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে।

কথা হয় কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী ফারুকুজ্জামানের সাথে তিনি জানান। কাজের প্রতি নিবেদিত প্রাণ এ মানুষটি কুষ্টিয়ার সন্তান এ জন্য তার গর্ব হয়। তিনি কামরুলের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন শুধু কুষ্টিয়া নয় তিনি যে কাজ করে গেছেন সারা বাংলাদেশে ও দেশের বাইরেও তার অবদার স্বীকার হয়ে থাকে।

নিউজটি শেয়ার করুন..


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

MonTueWedThuFriSatSun
      1
30      
1234567
891011121314
15161718192021
293031    
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
   1234
26272829   
       
293031    
       
    123
25262728293031
       
  12345
27282930   
       
      1
9101112131415
3031     
    123
45678910
11121314151617
252627282930 
       
 123456
78910111213
28293031   
       
     12
3456789
24252627282930
31      
   1234
567891011
19202122232425
2627282930  
       
293031    
       
  12345
6789101112
       
  12345
2728     
       
      1
3031     
   1234
19202122232425
       
293031    
       
    123
45678910
       
  12345
27282930   
       
14151617181920
28      
       
       
       
    123
       
     12
31      
      1
2345678
16171819202122
23242526272829
3031     
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
242526272829 
       
© All rights reserved © 2021 dainikkushtia.net
Design & Developed BY Anamul Rasel